নদী-মাতৃক বাংলাদেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ঐতিহ্যবাহী তিতাস-বিধৌত শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ১৭৬৯ সালে বাংলাদেশের প্রাচীনতম পৌরসভা হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই পৌরসভার জনগণের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৮৭৫ সালে একটি মহকুমা স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয় যা বর্তমানে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর ১৯৮৫ সালের ২৯শে এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মাননীয় মন্ত্রী মেজর জেনারেল এম শামসুল হক একটি স্বাস্থ্য প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন যা এন আই ভূঁইয়া স্বাস্থ্য প্রকল্প নামে পরিচিত ছিল। ১৯৯২ সালের ২৮শে এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে রূপান্তরিত করার জন্য ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। হাসপাতাল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরে ১৯৯৫ সালের ২৮শে অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব আলহাজ্ব হারুন আল রশিদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল নামে এই হাসপাতালের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার পরিসর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিল এবং জেলার একমাত্র সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করা শুরু করে। জনগণের চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ২০০৬ সালের ২০শে অক্টোবর বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও পাবলিক একাউন্টস কমিটির তৎকালীন চেয়ারম্যান জনাব অ্যাডভোকেট হারুন আল রশিদ, এম. পি. ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের পরে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০১০ সালের ১২ই মে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা দিন দিনই উন্নত হচ্ছিল এবং সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন স্থাপনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছিল। সেই সাথে বিশেষায়িত হাসপাতালের কিছু কিছু সেবা এখানে শুরু করার চিন্তা করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ২০১১ সালের ১৮ই মে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার বর্ধিত অংশের এবং কার্ডিওলজি বিভাগের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। বিভিন্ন পরিক্রমায় বর্তমানে হাসপাতালের নামটি পরিবর্তন হয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। অত্র জেলার জনগণ এবং আশেপাশের কিছু জেলা থেকেও এই হাসপাতালে প্রচুর রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান অন্যান্য জেলা সদর হাসপাতাল থেকে অনেক উন্নত। হাসপাতালে দিন দিনই নতুন নতুন সেবা কার্যক্রম যুক্ত হচ্ছে যা এই জেলার জনগণের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। রোগীদের চিকিৎসা সেবায় আমাদের রয়েছে লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন যা উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী । বর্তমানে হাসপাতালে বিভিন্ন বিশেষায়িত সেবা যোগ হয়েছে এর মধ্যে নবজাতকের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র, কার্ডিয়াক চিকিৎসার জন্য ইকোকার্ডিওগ্রাফি। এই দুটি সেবার উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী । নিয়মিত প্যাথলজি পরীক্ষার সাথে নতুন নতুন রোগ নির্ণয় পরীক্ষা যোগ হয়েছে, যেমন ডোপ টেস্ট, ট্রপোনিন আই, সিরাম ইলেকট্রোলাইট উল্লেখযোগ্য। জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে স্ক্রিনিং এর জন্য ভায়া এবং কল্পোস্কোপি পরীক্ষা হচ্ছে নিয়মিত। খুব শীঘ্রই যুক্ত হচ্ছে ডায়ালাইসিস সেবা এবং সিসিইউ ও আইসিইউ ইউনিট। হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা ৭দিন নিরাপদ স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এটিকে শিশু ও নারীবান্ধব হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। আরো রয়েছে মাতৃদুগ্ধ পান কর্নার। হাসপাতালে যুক্ত হয়েছে হেল্প ডেক্স, যা রোগীদের বিভিন্ন তথ্য জানাতে সাহায্য করছে। ভবিষ্যতে আরও অনেক নতুন নতুন সেবা যুক্ত হবে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনগণ উপকৃত হবে এই প্রত্যাশা রইল।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস